যাকাত: সংজ্ঞা, বিধান, এবং বিশদ আলোচনা।
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র ও অভাবীদের মধ্যে বিতরণের একটি বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত। যাকাত শব্দটি এসেছে "তাযকিয়া" থেকে, যার অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এটি মুসলমানদের সম্পদকে পবিত্র ও বরকতময় করে এবং সমাজে সম্পদ বৈষম্য দূর করে।
যাকাতের সংজ্ঞা
যাকাত হলো এমন একটি বাধ্যতামূলক কর, যা নির্দিষ্ট সম্পদের উপর নির্ধারিত হার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
কুরআনে যাকাতের উল্লেখ
"তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো।"
(সূরা আল-বাকারাহ, ২:৪৩)
"তাদের সম্পদে রয়েছে প্রার্থীদের এবং বঞ্চিতদের অধিকার।"
(সূরা আয-যারিয়াত, ৫১:১৯)
হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি: (১) আল্লাহর তাওহিদ এবং রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া, (২) সালাত কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) রমজানের রোজা রাখা, (৫) হজ করা।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ৮)
যাকাত কখন দিতে হয়?
যাকাত দিতে হলে নিম্নোক্ত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
-
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা:
- যাকাত দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির কাছে ন্যূনতম পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে, যা নিসাব নামে পরিচিত।
- সোনা অনুযায়ী নিসাব: ৮৭.৪৮ গ্রাম (৭.৫ তোলা সোনা)।
- রূপা অনুযায়ী নিসাব: ৬১২.৩৬ গ্রাম (৫২.৫ তোলা রূপা)।
- নগদ টাকা, সঞ্চয়, বাণিজ্যিক পণ্য, ও সম্পদের মোট মূল্য যদি এই নিসাব অতিক্রম করে, তাহলে যাকাত দিতে হবে।
-
এক বছর অতিক্রম করা:
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত ওয়াজিব হয়।
-
অতিরিক্ত সম্পদ:
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদে যাকাত ফরজ হয়।
যাকাত কাকে দিতে হয়?
কুরআনে যাকাতের প্রাপকদের তালিকা উল্লেখ রয়েছে:
"যাকাত তো ফকির-মিসকিনদের জন্য, যাকাতের কর্মচারীদের জন্য, যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয়ের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য।"
(সূরা আত-তাওবা, ৯:৬০)
যাকাত প্রাপকের বিবরণ:
- ফকির: যারা চরম দরিদ্র এবং জীবিকা অর্জনে অক্ষম।
- মিসকিন: যাদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটে না।
- আমিল: যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে নিযুক্ত ব্যক্তি।
- মু'আল্লাফাতুল কুলুব: যাদের হৃদয় ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যাকাত দেওয়া হয়।
- রিকাব: দাসদের মুক্তির জন্য।
- গারিম: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যারা ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম।
- ফি সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর পথে, যেমন জিহাদ, ইসলামের প্রচার বা জনকল্যাণমূলক কাজে।
- ইবনুস সাবিল: মুসাফির, যারা ভ্রমণে আর্থিক সমস্যায় পড়েছে।
যাকাত কে দিবে?
- যে মুসলমানের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে এবং তা এক বছর অতিক্রম করেছে।
- বয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান।
যাকাত না দিলে কী শাস্তি হবে?
কুরআনের শাস্তি
"যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ঘোষণা দাও।"
(সূরা আত-তাওবা, ৯:৩৪)
হাদিসে শাস্তির বর্ণনা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদ আগুনে গরম লোহার পাতের আকারে হবে। তা দিয়ে তার শরীর দগ্ধ করা হবে।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ১৪০৩)
উপসংহার
যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত, যা সম্পদকে পবিত্র করে এবং সমাজে দারিদ্র্য দূর করতে সহায়তা করে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী:
- যাকাত ২.৫% হারে আদায় করতে হবে।
- ফকির-মিসকিনসহ নির্দিষ্ট ৮ শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
- যাকাত না দেওয়া শাস্তি ও আজাবের কারণ হতে পারে।
মুসলমানদের উচিত যাকাতের এই বিধান গুরুত্ব সহকারে পালন করা এবং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা ও দায়িত্ব হিসেবে দেখা।
Very Helpable Post. I like it
ReplyDeleteI love the post
ReplyDelete