হানাফি মাজহাব মতে তারাবীর নামাজের রাকাত সংখ্যা।
হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত। এই সংখ্যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবা এবং খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। আজকাল ৮ রাকাত পড়ার প্রচলন একটি বিভ্রান্তি, যা তাহাজ্জুদ নামাজের সঙ্গে তারাবীর নামাজকে গুলিয়ে ফেলায় সৃষ্টি হয়েছে। নিচে দলিলসহ বিশদ আলোচনা করা হলো।
তারাবীর নামাজের মূলত্ব এবং প্রমাণ
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমল
তারাবীর নামাজের সূচনা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমল থেকেই পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুদিন সাহাবাদের সঙ্গে জামাআতে তারাবীহ পড়েছেন, পরে উম্মতের ওপর ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় এটি জামাআতে নিয়মিত না করে ব্যক্তিগতভাবে আদায়ের জন্য উম্মতকে উৎসাহ দিয়েছেন।
"আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার রমজানে রাতের নামাজে আমাদের নিয়ে জামাআত করলেন।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ২০১০)
যদিও তিনি নির্দিষ্টভাবে ২০ রাকাত উল্লেখ করেননি, তবে সাহাবাদের আমল থেকে তা সুন্নাহর রূপ লাভ করেছে।
২. সাহাবাদের আমল (উমর ইবনুল খাত্তাবের যুগ)
খলিফা উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সময় তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই প্রথা আজও বহাল রয়েছে। ইমাম মালিকের মুওয়াত্তা এবং ইমাম ইবনে আবি শাইবার আল-মুসান্নাফ-এ এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে।
"উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) উবাই ইবন কাব এবং তামীম আদ-দারীকে নির্দেশ দিলেন, তারা লোকদের ২০ রাকাত তারাবীহ পড়াবেন।"
(আল-মুসান্নাফ লি ইবনে আবি শাইবা, ২:৩৯৩; মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, ১:১৩৪)
এই আমলে সাহাবা এবং তাবেঈনদের মধ্যে কোন মতবিরোধ ছিল না।
৩. তাবেঈন ও চার মাজহাবের ফকিহগণের ঐকমত্য
- হানাফি, শাফেয়ি এবং হাম্বলি মাজহাব: ২০ রাকাত।
- মালিকি মাজহাব: ২০ রাকাত অথবা ৩৬ রাকাত।
সকল ইমামের অভিমত হলো, ২০ রাকাত তারাবীহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর অনুসরণে সাহাবারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
৮ রাকাত তারাবীর দাবির ভিত্তি এবং তা খণ্ডন
৮ রাকাতের পক্ষে উল্লেখিত হাদিস
কিছু মানুষ আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করে দাবি করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও ৮ রাকাতের বেশি পড়েননি।
➡️ *ব্যাখ্যা:*
এই হাদিসে যে ১১ রাকাতের কথা বলা হয়েছে, তা তারাবির নয়, বরং তাহাজ্জুদের নামাজের উল্লেখ। প্রখ্যাত ইসলামি স্কলারদের মতে, তারাবি নামাজ ও তাহাজ্জুদের নামাজ ভিন্ন।
#### তাহাজ্জুদ ও তারাবির পার্থক্য:
1. তাহাজ্জুদ সারা বছর আদায় করা হয়।
2. তারাবি কেবল রমজানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
*ইবনে আব্দুল বার বলেছেন:*
*"৮ রাকাত তারাবি কুরআন এবং সাহাবাদের আমলে পাওয়া যায় না।"*
(আল-ইস্তিযকার: ৫/৬৫)
"আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজান এবং অন্যান্য সময় ১১ রাকাতের বেশি নামাজ পড়েননি।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৭৩৬)
এই হাদিসের বিশ্লেষণ
১. এই হাদিসে রাতের নামাজের (তাহাজ্জুদ) কথা বলা হয়েছে, তারাবীর কথা নয়।
২. তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ ভিন্ন ইবাদত।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় সাহাবারা জামাআতে ২০ রাকাত পড়েছেন, যা উমর (রা.)-এর সময় নিয়মিত করা হয়েছে।
২০ রাকাত তারাবীর দলিলের সারসংক্ষেপ
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় সাহাবারা তারাবীর নামাজ আদায় করতেন।
২. খলিফা উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ২০ রাকাত তারাবীহ জামাআতের নিয়ম চালু করেন।
৩. চার মাজহাবের ইমাম এবং ফকিহগণ ২০ রাকাত তারাবীহকেই সুন্নাহ বলেছেন।
৪. প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত ২০ রাকাত তারাবীহ ইসলামের মূলধারার আমল।
### *২০ রাকাতের দলিল: উম্মতের ইজমা*
#### ১. সাহাবিদের ঐক্যমত:
উমর (রা.), আলী (রা.), এবং অন্যান্য সাহাবারা সর্বসম্মতিক্রমে ২০ রাকাত তারাবি পড়ার প্রচলন করেন। এটি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত আমল।
#### ২. চার মাজহাবের মতামত:
- *হানাফি মাজহাব:* ২০ রাকাত।
- *মালিকি মাজহাব:* ২০ রাকাত।
- *শাফেয়ি মাজহাব:* ২০ রাকাত।
- *হাম্বলি মাজহাব:* ২০ রাকাত।
### *৮ রাকাত পড়ার সমস্যা*
1. *সুন্নাহর বিরোধিতা:*
৮ রাকাত তারাবি সাহাবা ও তাবেয়ীদের আমলে প্রচলিত ছিল না।
2. *ইজমা অমান্য করা:*
২০ রাকাত তারাবি উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
উপসংহার
হানাফি মাজহাবসহ অধিকাংশ মুসলিম ইমাম এবং উম্মাহর ঐকমত্য হলো, তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত। ৮ রাকাত তারাবীহের ধারণা একটি ভুল ব্যাখ্যা এবং তা ইসলামের মূলধারার পরিপন্থী। মুসলমানদের উচিত সাহাবাদের অনুসৃত ২০ রাকাতের আমল বজায় রাখা এবং ইসলামের সুন্নাহর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা।
Very good keep it up always i will support always you
ReplyDeleteAllah apki khidmat ko kabul kare ameen
ReplyDelete