ইসলামী শরীয়তে বাচ্চা জন্মানোর পরে আগুন ছোঁয়া বা লোহা কিনারে রাখা, অথবা কেউ বাইরে থেকে এলে আগুন ছোঁয়া ইত্যাদি কাজের কোনও নির্দিষ্ট ভিত্তি নেই। এই কাজগুলো সাধারণত কুসংস্কার, সামাজিক রীতি, বা লোকজ বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত, যা ইসলামের সাথে সম্পর্কিত নয়। নিচে এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে আলোচনা করা হলো:
১. ইসলামী বিশ্বাস ও শিরক সংক্রান্ত দিক
ইসলাম স্পষ্টভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (বিশ্বাস ও নির্ভরতা) এবং কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
"তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক ছাড়া আমরা অন্য কাউকে পূজা করব না।’"
(সূরা আল-কাহফ, ১৮:৩৯)
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি কুসংস্কারে বিশ্বাস করে, সে তাওহিদ থেকে বিচ্যুত হয়।"
(তিরমিজি, হাদিস: ২২৪৪)
আগুন, লোহা বা অন্য কোনো বস্তুর মাধ্যমে সুরক্ষা চাওয়া শিরক হতে পারে যদি তা আল্লাহর ওপর নির্ভর না করে করা হয়।
২. বাচ্চা জন্মের পরে আগুন বা লোহা রাখা:
অনেক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় যে নবজাতক এবং মায়ের উপর জিন বা শয়তানের প্রভাব পড়তে পারে। ইসলাম এই প্রভাবের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে না, তবে তার জন্য সঠিক আমল বা দোয়া শিখিয়েছে।
নিম্নলিখিত আমলগুলো ইসলাম সম্মত:
- আয়াতুল কুরসী পড়া।
- সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস পড়া।
- নবজাতককে আল্লাহর নামে দোয়া করা। যেমন:
"উঈযুকুমা বিউ’যতিল্লাহি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।"
(বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৫)
লোহা বা আগুন রাখা জিন-শয়তান থেকে রক্ষা করার কোনও ইসলামি পদ্ধতি নয়। এটি সংস্কার বা কুসংস্কার থেকে উদ্ভূত।
৩. বাইরের লোক এলে আগুন ছোঁয়া:
ইসলামী শরীয়তে বাইরের কেউ এলে আগুন ছোঁয়া বা লোহা ব্যবহার করার কোনও নির্দেশনা নেই। এটি লোকজ রীতির অংশ। বাইরের মানুষ থেকে যদি জিন বা নজর লাগার ভয় থাকে, তাহলে ইসলামি উপায় হলো:
- আসসালামু আলাইকুম বলা।
- মেহমানের জন্য দোয়া করা।
- কোনও সন্দেহ থাকলে আয়াতুল কুরসী এবং অন্যান্য সুরা পড়া।
৪. ইসলামে সুরক্ষা ও দোয়ার নির্দেশনা:
ইসলাম কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং রক্ষার জন্য দোয়া ও আমলের পদ্ধতি শিখিয়েছে। নিম্নলিখিত দোয়াগুলো নিয়মিত পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে:
- সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস।
- "বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা, ওয়া হুয়াস সামি’উল আলিম।"
(তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৮)
উপসংহার:
বাচ্চা জন্মানোর পরে আগুন ছোঁয়া বা লোহা রাখা এবং বাইরের লোক এলে আগুন ছোঁয়া ইসলামে অনুমোদিত নয়। এগুলো সংস্কার ও কুসংস্কারের অংশ। মুসলমানদের উচিত শুধুমাত্র কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা। কুসংস্কার থেকে বেঁচে থেকে আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে।
যদি এর কোনো ঐতিহাসিক বা সংস্কৃতিগত ভিত্তি থাকে, তবে তা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশুদ্ধ নয় এবং তা এড়িয়ে চলা উচিত।