যাকাত কাকে দিতে হয় ? কোন ধরণের মানুষ কে যাকাত দিতে হয়?
যাকাত কাকে দিতে হয়: কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ
যাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এমন একটি দান, যা সমাজের নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষদের জন্য বরাদ্দ। যাকাত প্রদানের বিধান আল্লাহ কুরআন এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিসের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছেন।
যাকাতের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা (আহলে যাকাত)
কুরআনে সুরা আত-তাওবার (৯:৬০) তে যাকাত দেওয়ার জন্য আট শ্রেণির মানুষ উল্লেখ করা হয়েছে:
-
ফকির (অতি দরিদ্র):
যারা সম্পূর্ণ অভাবগ্রস্ত এবং জীবিকার কোনো পর্যাপ্ত উপায় নেই।"যাকাত তো হলো কেবল ফকিরদের জন্য..."
(সুরা আত-তাওবা: ৬০) -
মিসকিন (অভাবী):
যাদের কিছু আছে, কিন্তু তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়। -
যাকাত সংগ্রহকারী (আমিলুন আলাইহা):
যারা যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা তাদের কাজের জন্য যাকাত থেকে অংশ পেতে পারে। -
মু'আল্লাফাতুল কুলুব (নতুন মুসলিম বা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা):
যারা সদ্য ইসলাম গ্রহণ করেছে অথবা যাদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। -
দাসমুক্তি (রিকাব):
যারা দাসত্ব বা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। -
ঋণগ্রস্ত (গারিমিন):
যাদের বৈধ কারণে ঋণ হয়েছে এবং তা পরিশোধ করতে অক্ষম। -
আল্লাহর পথে খরচ (ফি সাবিলিল্লাহ):
যারা আল্লাহর ধর্ম প্রচার, জিহাদ, বা ইসলামের উন্নতির জন্য কাজ করছে। -
মুসাফির (অভাবগ্রস্ত ভ্রমণকারী):
যারা ভ্রমণের সময় অভাবে পড়েছে এবং নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সহায়তা প্রয়োজন।
হাদিসের আলোকে যাকাত গ্রহীতার যোগ্যতা
-
ফকির ও মিসকিনদের অধিকারের প্রতি গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:"যাকাত ধনীদের জন্য নয়, এটি শুধুমাত্র ফকির ও মিসকিনদের জন্য।"
(সহিহ বুখারি: ১৪০৫) -
ঋণগ্রস্তদের সহায়তা
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:"ঋণগ্রস্ত এমন ব্যক্তি, যে বৈধ প্রয়োজনের জন্য ঋণ করেছে এবং তা পরিশোধে অক্ষম, তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ।"
(আবু দাউদ: ১৬২৬) -
ফি সাবিলিল্লাহর ব্যবহার
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:"যাকাত হলো ফি সাবিলিল্লাহ, আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও দ্বীনের সেবায় খরচের জন্য।"
(তিরমিজি: ৬৭১)
যাকাত দেওয়ার শর্ত ও বিধিনিষেধ
-
যাকে যাকাত দেওয়া যাবে না:
- ধনী ব্যক্তি।
- রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বংশধর (আহলে বায়ত)।
- যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য নয়, যেমন নিজের পিতামাতা, সন্তান, বা স্ত্রী।
-
নিজ পরিবারের জন্য যাকাত নিষিদ্ধ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:"সদকা (যাকাত) হলো মোহাম্মদের বংশধরের জন্য হারাম।"
(সহিহ মুসলিম: ১০৭২)
যাকাতের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য
- দারিদ্র্য দূরীকরণ:
যাকাত বিতরণের মাধ্যমে সমাজের অভাবগ্রস্ত মানুষদের প্রয়োজন মেটানো হয়। - সামাজিক ন্যায়বিচার:
অর্থের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী ও গরিবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। - আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:
যাকাত প্রদান দ্বারা ধনী তার সম্পদ পবিত্র করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে।
উপসংহার
যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা সমাজের দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত, এবং নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষদের সাহায্যের জন্য নির্ধারিত। কুরআন ও হাদিসে যাকাতের গ্রহীতাদের স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
তাই, যাকাত বিতরণের ক্ষেত্রে কোরআন ও হাদিসে প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে চলা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব।