হানফি মাযহাব মতে নামাজে ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে কি? যদি না হয় তবে কেন?
হানফি মাযহাব মতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার বিধান
হানফি মাযহাবে নামাজে ইমামের পিছনে দাঁড়ানো মুকতাদির (অনুসরণকারীর) জন্য সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক নয়। বরং ইমামের কিরাআতকেই অনুসরণ করা এবং শুনা যথেষ্ট বলে গণ্য হয়। এর পক্ষে কোরআন ও হাদিসে দলিল রয়েছে।
কোরআন থেকে দলিল
-
ইমামের কিরাআত শোনার নির্দেশ
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন:"আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।"
(সুরা আল-আ’রাফ: ২০৪)এই আয়াতের মর্ম হলো, নামাজে ইমাম যখন কিরাআত করেন, তখন মুকতাদিদের জন্য তা শুনা এবং চুপ থাকা আবশ্যক। এখানে কোনো ব্যতিক্রম বা ইঙ্গিত নেই যে, মুকতাদি নিজেও কিরাআত করবে।
-
ইমামের জন্য অনুসরণ নির্দেশিত হয়েছে
আল্লাহ বলেন:"নামাজে ইমামের অনুসরণ করো।"
(সুরা আন-নিসা: ৫৯, ব্যাখ্যার সূত্র ধরে)
হাদিস থেকে দলিল
-
ইমামের কিরাআতই যথেষ্ট
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:"যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে, তার জন্য ইমামের কিরাআতই যথেষ্ট।"
(আবু দাউদ: ৮২৩, তিরমিজি: ৩১১)এই হাদিসে স্পষ্টতই বোঝানো হয়েছে যে, ইমামের পেছনে দাঁড়ানো মুকতাদিদের জন্য আলাদা করে সূরা ফাতিহা পড়া জরুরি নয়।
-
ইমামকে অনুসরণ করো
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:"ইমাম এজন্য নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তাকে অনুসরণ করা হবে। কাজেই, যখন সে তাকবির বলে, তোমরাও তাকবির বলো, এবং যখন সে কিরাআত করে, তখন তোমরা চুপ থাকবে।"
(সহিহ মুসলিম: ৪১১) -
ইমামের পেছনে ফাতিহা না পড়া সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:"যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে, সে যেন কিছু না পড়ে। ইমামের পেছনে ইমামের কিরাআতই যথেষ্ট।"
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১/৪১৮)
হানাফি মাজহাবের ব্যাখ্যা
হানাফি মাজহাব মতে, ইমাম যখন নামাজে কিরাআত করেন, তখন মুকতাদি কিরাআত করার অনুমতি নেই। নিম্নলিখিত কারণগুলো এই মতের ভিত্তি:
-
ইমামের কিরাআত নামাজের জন্য সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:"ইমাম এজন্য নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তার কিরাআত তোমাদের জন্য পর্যাপ্ত হবে।"
(মুসনাদে আহমদ: ১২৪০) -
দৃষ্টি আকর্ষণ না করার জন্য নির্দেশ:
মুকতাদিদের জন্য ইমামের পেছনে কিরাআত করা ইসলামের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। কারণ, এতে ইমামের কিরাআত শুনতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। -
চুপ থাকার নির্দেশনা
উপরোক্ত হাদিস এবং কোরআনের আয়াতের ভিত্তিতে বোঝা যায়, নামাজের সময় চুপ থাকার মাধ্যমে ইমামের কিরাআত শুনাই মুকতাদির জন্য উত্তম।
কোন কোন নামাজে এই নিয়ম প্রযোজ্য?
-
জাহরি নামাজ (উচ্চস্বরে পড়া নামাজ):
- ফজর, মাগরিব ও ইশার প্রথম দুই রাকাতে ইমামের কিরাআত শোনা ফরজ।
- মুকতাদিদের কিরাআত না পড়া উচিত।
-
সিরি নামাজ (নিচু স্বরে পড়া নামাজ):
- যোহর ও আসরের নামাজে এবং মাগরিব ও ইশার শেষ দুই রাকাতে মুকতাদির কিরাআত পড়বে না।
- কেবল "সুবহানাল্লাহ", "আলহামদুলিল্লাহ" ইত্যাদি দোয়া পাঠ করতে পারে।
উপসংহার
- কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ: ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং ইমামের কিরাআতই যথেষ্ট।
- মাজহাবের ফিকাহ: হানাফি মাজহাবের অনুসারীরা এই বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে নির্ভরশীল।
- অন্য মাজহাবের অবস্থান: শাফেয়ি মাজহাবে মুকতাদিদের জন্য সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক। তবে হানাফি মাযহাবে তা প্রযোজ্য নয়।
তাই, হানাফি মাজহাব অনুযায়ী ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং চুপ থাকা উত্তম।