পর্দা কি ? পুরুষ ও মহিলাদের পর্দা কতটুকু করা ফরজ? কোরান ও হাদিস থেকে বিস্তারিত আলোচনা।
পর্দা: সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ইসলামে পর্দা বলতে পুরুষ ও নারীর জন্য শরীর ঢেকে রাখা, লজ্জা-শালীনতা বজায় রাখা এবং নিজেকে হারাম সম্পর্ক থেকে রক্ষা করার এক অনন্য বিধান বোঝায়। এটি সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা এবং পাপ থেকে রক্ষার একটি মাধ্যম।
পর্দা শুধু পোশাকের বিধান নয়; এটি দৃষ্টি, কথাবার্তা, আচরণ এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
পুরুষ ও মহিলাদের পর্দার বিধান
পুরুষের পর্দা
পুরুষের শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা ফরজ:
- নারীদের সামনে ও নামাজের সময়: নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ।
- কোরআনের নির্দেশ:
"মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য অনেক পবিত্র।"
(সুরা আন-নুর: ৩০)
দৃষ্টি সংযম:
পুরুষদের জন্য অমহরামের (যার সাথে বিয়ে করা বৈধ) দিকে কামনার চোখে তাকানো হারাম।
আচরণগত পর্দা:
- পর নারীদের সাথে অশালীন কথা ও অঙ্গভঙ্গি করা নিষিদ্ধ।
- শালীনতা বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
মহিলাদের পর্দা
মহিলাদের শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা ফরজ:
-
নারীদের শরীর: চেহারা ও হাতের কব্জি ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।
-
কোরআনের নির্দেশ:
"আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, যা সাধারণত প্রকাশিত হয় তা ছাড়া। এবং তারা যেন তাদের ওড়না বুক পর্যন্ত টেনে দেয়।"
(সুরা আন-নুর: ৩১) -
চেহারা ঢাকার মতামত:
বিভিন্ন মাজহাব অনুযায়ী, মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা সুন্নত বা আবশ্যক হতে পারে। তবে সৌন্দর্যের দিক থেকে যদি ফিতনার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে চেহারা ঢাকার বিষয়টি ফরজ হয়ে যায়।
দৃষ্টি সংযম:
- নারীদের জন্য অমহরামের দিকে তাকানো নিষিদ্ধ।
- তারা যেন কোনো ধরনের শয়তানি প্ররোচনা সৃষ্টি না করে।
কথাবার্তা ও আচরণ:
- কোরআনে নারীদের আচরণের বিষয়ে বলা হয়েছে:
"আর তোমরা নম্রতার সাথে কথা বলো না, যাতে এমন কেউ লালসায় মত্ত না হয়, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে।"
(সুরা আহযাব: ৩২)
কোরআনের দলিল
-
পর্দার মৌলিক নির্দেশ:
"হে নবী, তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন নিজেদের চাদর দিয়ে নিজেদের ঢেকে রাখে। এটি তাদের চেনার জন্য এবং যেন তারা উত্যক্ত না হয়।"
(সুরা আহযাব: ৫৯) -
পুরুষ ও নারীদের দৃষ্টি সংযম:
"মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর মুমিন নারীদেরও বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।"
(সুরা আন-নুর: ৩০-৩১)
হাদিসের দলিল
-
দৃষ্টি সংযমের গুরুত্ব:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:"প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য মাফ, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি হবে পাপ।"
(আবু দাউদ: ২১৪৯) -
নারীদের পর্দার নির্দেশ:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:"যে নারীরা কাপড় পরেও নগ্ন থাকে এবং যাদের মাথা উটের কুঁজের মতো হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।"
(সহিহ মুসলিম: ২১২৮) -
পর্দা ঢাকার পদ্ধতি:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:"নারী পুরোপুরি আবরিত থাকবে, তার মুখমণ্ডল ও হাত ব্যতীত।"
(আবু দাউদ: ৪১০৪)
পর্দার উপকারিতা
- নৈতিকতা রক্ষা:
পর্দা ব্যক্তি ও সমাজে শালীনতা বজায় রাখে। - ফিতনা থেকে বাঁচা:
দৃষ্টির পর্দা এবং শরীরের পর্দা পাপ থেকে রক্ষা করে। - সমাজে সুস্থ পরিবেশ:
পর্দার মাধ্যমে সমাজে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।
উপসংহার
- পুরুষ ও নারীর পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো লজ্জা-শালীনতা বজায় রাখা এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলা।
- কোরআন ও হাদিসে পর্দার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
- পর্দার মাধ্যমে ব্যক্তিগত পবিত্রতা, সমাজের শালীনতা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব।
পর্দা ইসলামের মৌলিক বিধান, যা আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পালন করা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব।