ইসলামে যে ১৪ জন নারীকে বিবেহ করা হারাম দলিল সহ আলোচনা কর?

  ইসলামে যে ১৪ জন নারীকে বিবেহ করা হারাম দলিল সহ আলোচনা কর?

ইসলামে যে ১৪ জন নারীকে বিবেহ করা হারাম দলিল সহ আলোচনা কর?


ইসলামে কিছু নারীকে বিবাহ করা হারাম করা হয়েছে, যা পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এদেরকে "মুহররমাত" বলা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা, সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং আল্লাহর বিধান মান্য করার জন্য আরোপিত হয়েছে।

নিচে ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী বিবাহ হারাম এমন ১৪ জন নারীর তালিকা ও তাদের সঙ্গে বিবাহ হারামের দলিলসহ বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো:


বিবাহ হারাম এমন নারীদের তালিকা

পবিত্র কুরআনে সূরা আন-নিসা’র ২২-২৩ নম্বর আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিচে এই নারীদের পরিচিতি দেওয়া হলো:

১. নিজের মা (ওম্মাহাত)

মায়ের সঙ্গে বিবাহ করা সম্পূর্ণ হারাম।
দলিল:
আল্লাহ বলেন:

"তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মায়েরা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

২. নিজের কন্যা (বানাত)

নিজের কন্যার সঙ্গে বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম।
দলিল:

"...তোমাদের কন্যারা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

৩. নিজের বোন (আখাওয়াত)

সাগরেদ বা বৈপিত্রীয় (পিতা বা মাতৃসঙ্গী) বোনের সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ।
দলিল:

"...তোমাদের বোনেরা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

৪. নিজের ফুফু (আম্মাত)

নিজের পিতার বোন বা ফুফুর সঙ্গে বিবাহ করা হারাম।
দলিল:

"...তোমাদের পিতার বোনেরা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

৫. নিজের খালা (খালাত)

মাতার বোন বা খালার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ।
দলিল:

"...তোমাদের মায়ের বোনেরা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

৬. ভাতিজি (বানাতুল আখ)

নিজের ভাইয়ের কন্যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ।
দলিল:

"...তোমাদের ভাইয়ের কন্যারা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

৭. ভাগ্নি (বানাতুল উখত)

নিজের বোনের কন্যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ।
দলিল:

"...তোমাদের বোনের কন্যারা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

৮. দুধ-মা (রাযিয়াহ)

যে নারী শৈশবে দুধ পান করিয়েছেন (দুধ-মা), তার সঙ্গে বিবাহ হারাম।
দলিল:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"রক্ত সম্পর্কের জন্য যা হারাম, দুধ সম্পর্কেও তা হারাম।"
(বুখারি, মুসলিম)

ইসলামে যে ১৪ জন নারীকে বিবেহ করা হারাম দলিল সহ আলোচনা কর?


৯. দুধ-বোন (আখতু রাযিয়াহ)

দুধ-মায়ের সন্তানদের সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ।
দলিল:
উপরের হাদিস একইভাবে প্রযোজ্য।

১০. স্ত্রীর মা (উম্মু যাওজাহ)

বিবাহের পর স্ত্রীর মা বা শাশুড়ির সঙ্গে বিবাহ করা হারাম।
দলিল:

"...তোমাদের স্ত্রীর মায়েরা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

১১. স্ত্রীর কন্যা (রাবাইব)

যে নারীকে বিবাহ করা হয়েছে, তার আগের স্বামীর সন্তান বা কন্যার সঙ্গে বিবাহ হারাম।
দলিল:

"...তোমাদের স্ত্রীর কন্যারা, যারা তোমাদের পরিচর্যায় আছে..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

১২. পুত্রবধূ (হিলাত)

নিজের ছেলে বা পালিত ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ হারাম।
দলিল:

"...তোমাদের পুত্রদের স্ত্রীরা..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

১৩. দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা (আখাওয়াতুল মুসতারিকাহ)

একই সময়ে দুই বোনকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।
দলিল:

"...এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে..."
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩)

১৪. স্ত্রীর ফুফু বা খালা (আম্মাতু যাওজাহ/খালাতু যাওজাহ)

স্ত্রীর জীবদ্দশায় তার ফুফু বা খালার সঙ্গে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।
দলিল:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"কোনো নারী এবং তার ফুফু অথবা কোনো নারী এবং তার খালাকে একসঙ্গে বিবাহ করো না।"
(বুখারি, মুসলিম)

 


এই নিষেধাজ্ঞার কারণ ও গুরুত্ব

১. রক্ত সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষা:
নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে বিবাহ হারাম করার মাধ্যমে পরিবারের সংহতি ও বিশুদ্ধতা বজায় রাখা হয়।

২. সামাজিক ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা:
যে সম্পর্কগুলো পারিবারিক প্রেম ও দায়িত্বে নির্ধারিত, সেগুলো বিবাহ সম্পর্কিত জটিলতা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে।

৩. মানবজাতির শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই বিধান আরোপ করে পারিবারিক বন্ধন ও নৈতিকতাকে সুরক্ষিত করেছেন।


উপসংহার

ইসলামে এই নারীদের সঙ্গে বিবাহ হারাম করার পেছনে রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখার মহান উদ্দেশ্য। আল্লাহর নির্ধারিত এই বিধান মেনে চললে ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাময়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!