কত কারণে নামাজ ভংগ হয় ও কি কি ?
নামাজ ভঙ্গ হওয়ার কারণসমূহ ইসলামী ফিকহে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো সাধারণত এমন বিষয় যা নামাজের শর্ত বা রোকন পূরণে ব্যাঘাত ঘটায়। নিচে নামাজ ভঙ্গের কারণগুলো এবং সংশ্লিষ্ট দলিলসমূহ আলোচনা করা হলো:
নামাজ ভঙ্গ হওয়ার কারণসমূহ
-
তাহারার অভাব (অজু বা গোসল ভঙ্গ হওয়া)
যদি নামাজ অবস্থায় অজু বা পবিত্রতা ভঙ্গ হয়, তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়।
দলিল:- আল্লাহ বলেন:
"হে মুমিনগণ! তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়ালে মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো এবং মাথা মাসাহ করো এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করো।"
(সূরা মায়েদা: ৬) - হাদিস: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"অজু ছাড়া নামাজ কবুল হয় না।"
(সহিহ মুসলিম: ২২৪)
- আল্লাহ বলেন:
-
কিবলামুখী না থাকা
নামাজের সময় কিবলার দিকে না থাকলে নামাজ ভঙ্গ হবে।
দলিল:- আল্লাহ বলেন:
"তাহলে তোমার মুখ পবিত্র মসজিদের দিকে ফিরিয়ে দাও।"
(সূরা বাকারা: ১৪৪)
- আল্লাহ বলেন:
-
বাতকর্ম করা বা গ্যাস নির্গত হওয়া
নামাজ অবস্থায় বাতকর্ম করলে নামাজ ভঙ্গ হয়।
দলিল:- হাদিস: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"নামাজ ভঙ্গ হয় বাতকর্মের মাধ্যমে।"
(সহিহ বোখারি: ১৩৫, সহিহ মুসলিম: ২৭১)
- হাদিস: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
-
হাসি-ঠাট্টা বা উচ্চস্বরে কথা বলা
নামাজে কোনো শব্দ বা কথা বললে নামাজ ভঙ্গ হয়।
দলিল:- হাদিস: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"নামাজে মানুষের কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।"
(সহিহ বোখারি: ১২০০)
- হাদিস: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
-
খাওয়া বা পান করা
নামাজে কিছু খাওয়া বা পান করলে নামাজ ভঙ্গ হবে।
দলিল: - হাদিস:
"নামাজে খাওয়া বা পান করা বৈধ নয়।"
(জামে তিরমিজি: ৩৯০)
-
অনর্থক কাজ করা (অতিরিক্ত নড়াচড়া)
এমন কাজ যা নামাজের আদবের পরিপন্থী বা নামাজের মনোযোগ নষ্ট করে, তা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়।
দলিল:- আল্লাহ বলেন:
"নিশ্চয়ই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে খুশু-খুজু করে।"
(সূরা মুমিনুন: ১-২)
- আল্লাহ বলেন:
-
সাজদাহ বা রোকু ছেড়ে দেওয়া
নামাজে সাজদাহ বা রোকু ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়।
দলিল:- হাদিস:
"যে ব্যক্তি নামাজে রোকু ও সাজদা সম্পূর্ণরূপে করে না, তার নামাজ গ্রহণযোগ্য নয়।"
(সহিহ মুসলিম: ৩৯৮)
- হাদিস:
-
নাপাক পোশাক বা স্থান
যদি নামাজে কোনো ব্যক্তি নাপাক পোশাক পরে বা নাপাক স্থানে দাঁড়ায়, তাহলে নামাজ ভঙ্গ হবে।
দলিল:- হাদিস:
"নামাজ নাপাক অবস্থায় বৈধ নয়।"
(সহিহ বোখারি: ৩৫৮)
- হাদিস:
-
নিয়ত ছাড়া নামাজ শুরু করা
নামাজের জন্য নিয়ত করা বাধ্যতামূলক। যদি কেউ নিয়ত ছাড়া নামাজ শুরু করে, তবে তা শুদ্ধ হবে না।
দলিল:- হাদিস:
"সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।"
(সহিহ বোখারি: ১)
- হাদিস:
-
সতর (শরীর ঢাকনা) খুলে যাওয়া
নামাজ অবস্থায় যদি সতরের অংশ অনাবৃত হয়, তাহলে নামাজ বাতিল হবে।
দলিল:- আল্লাহ বলেন:
"হে আদম সন্তানেরা! তোমরা প্রতিটি ইবাদতের সময় তোমাদের সাজ-সজ্জা গ্রহণ কর।"
(সূরা আ'রাফ: ৩১)
- আল্লাহ বলেন:
উপসংহার
নামাজ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে অবশ্যই এর শর্ত ও রোকনগুলো মেনে চলতে হবে এবং নামাজ ভঙ্গকারী বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। উপরোক্ত কারণগুলো ইসলামের নির্ভরযোগ্য দলিল থেকে প্রমাণিত। প্রত্যেক মুমিনের উচিত নামাজ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় করা।