মাযহাব কি? মাযহাব কেন মানতে হবে ?
মাযহাব (মাধ্যম) বলতে বোঝানো হয় কোনো নির্দিষ্ট নীতি বা পদ্ধতি অনুসারে শরীয়তী নিয়মাবলীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া। এটি হলো এমন একটি পদ্ধতি, যা মুসলমানদেরকে কুরআন ও হাদিসের আলোকে শরীয়তের বিধি-বিধান বোঝা এবং পালন করতে সাহায্য করে। সংক্ষেপে, মাযহাব মানা বলতে বোঝায় শরীয়তের প্রস্তাবিত নিয়ম মেনে চলার একটি পদ্ধতি।
মাযহাব কেন মানতে হবে?
1. সঠিক পথে পরিচালনার জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “আপনারা আল্লাহর পথে পরিচালিত হন এবং বিভ্রান্ত হবেন না” (সূরা: আন’আম, ১৫৩)। সাহাবায়ে কিরাম শরীয়তের সঠিক ব্যাখ্যার জন্য নির্দিষ্ট ইমামদের অনুসরণ করেছেন, যা মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেছে।
2. গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন।
প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে কুরআন ও হাদিসের সব বিধান নিজে নিজে বোঝা সম্ভব নয়। এটি একটি বিশেষজ্ঞের কাজ। মাযহাব আমাদেরকে অভিজ্ঞ আলেমদের মাধ্যমে শরীয়তের বিধান সঠিকভাবে পালন করতে সাহায্য করে।
3. নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান।
মাযহাব বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে শরীয়তের সমাধান সরবরাহ করে, যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে নিজে নিজে বের করা কঠিন।
লা-মাযহাব কি?
লা-মাযহাব বলতে বোঝানো হয় এমন ব্যক্তিদের, যারা কোনো নির্দিষ্ট মাযহাব মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা সরাসরি কুরআন ও হাদিস থেকে বিধান বোঝার চেষ্টা করে। তবে, এ ধরনের পন্থা অনেক সময় বিভ্রান্তি এবং ভুল সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
কুরআনের দৃষ্টিতে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “আপনারা আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসরণ করুন” (সূরা: আন-নিসা, ৫৯)। এই আয়াত নির্দেশ করে যে, আল্লাহর নির্দেশনা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে হবে।
হাদিসের দৃষ্টিতে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত হবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়” (সহীহ মুসলিম)। মাযহাব অনুসরণ সুন্নাহের পরিপূর্ণ অনুসরণের একটি মাধ্যম।
মাযহাব না মানলে কি হবে?
মাযহাব না মানার ফলে শরীয়তের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে। এটি বিভ্রান্তি এবং ইসলামের ভুল চর্চার জন্ম দিতে পারে। বিশেষজ্ঞ আলেমদের ব্যাখ্যা ছাড়া কুরআন ও হাদিস থেকে নিজে নিজে বিধান বের করা সাধারণ মানুষের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
লা-মাযহাবীদের অবস্থা।
লা-মাযহাবীরা অনেক ক্ষেত্রে সরলতার নামে শরীয়তের মূলনীতি থেকে সরে যেতে পারে। তবে, সকল লা-মাযহাবীকে ইমানদার বলা যাবে না, কারণ অনেকেই অজ্ঞতাবশত এমনটা করে থাকে। তাদের সঠিক পথে আনার জন্য আলেমদের সাহায্য নেওয়া উচিত।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে মাযহাব অনুসরণ।
কুরআনের নির্দেশনা।
কুরআনে আল্লাহ বলেন, “আপনারা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করুন, যদি না জানেন” (সূরা: আন-নাহল, ৪৩)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আলেমদের মতামত গ্রহণ করাই শরীয়তের পথে সঠিকভাবে চলার মাধ্যম।
হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমার সাহাবারা নক্ষত্রের মতো; তাদের যে কারো অনুসরণ করবে, সে সঠিক পথ পাবে” (তিরমিজি)। ইমামগণ সাহাবাদের পথে চলেই শরীয়তের বিধান প্রণয়ন করেছেন।
উপসংহার।
মাযহাব অনুসরণ করা ইসলামের মূলনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি সাধারণ মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান সহজে পালন করার উপায়। কুরআন ও হাদিসের আলোকে মাযহাবের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। তবে, লা-মাযহাবীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দাওয়াত ও শিক্ষার প্রয়োজন।